একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো দুরূদ শরীফ। এটি আমল করার মাধ্যমে একইসাথে আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এটি মুমিনদের প্রিয় তাসবিহ। পবিত্র কুরআনেও এর অনেক তাগিদ আছে। দরূদ শরীফ পাঠ আমাদের নবী (সাঃ) এর প্রতি ভালবাসার প্রকাশ। আল্লাহ তা’আলার প্রিয় হাবীব রাসূল (সাঃ) এর উপর দুরূদ পাঠ করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।
সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন –
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠান। হে মুমিনরা! তোমরাও নবীর জন্যে দরুদ পাঠাও এবং তাঁর প্রতি সালাম পেশ কর ও তাঁর নির্দেশের অনুগত হও।” (সূরা আহযাব: ৫৬)
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন।” (সহিহ মুসলিম)।
দরূদ শব্দের আরবি হলো সালাত। এর অর্থ হলো দুরূদ বা শুভকামনা, তাসবীহ, গুণকীর্তন, রহমত, দয়া, করুণা, ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রর্থনা করা ইত্যাদি। দুরুদ শরীফ এমন একটি তাসবিহ যা মুসলমানরা নির্দিষ্ট বাক্যাংশ পড়ে ইসলামের সর্বশেষ নবী (সাঃ) এর শান্তির প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে পড়া হয়। তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ আরবি সহ অর্থ এবং দরুদ শরীফ পড়ার নিয়ম ও ফজিলত।
তাশাহহুদের পর আমাদের রাসূল (সাঃ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হয়। দুরূদ শরীফ পাঠ করা ব্যতীত সালাত আদায় করা হয় না। তাই আমাদের সবার উচিত বুঝে শুনে শুদ্ধভাবে দুরূদ শরীফ পাঠ করা।
দরুদ শরীফ আরবি
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ’ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ. اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ. اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ
দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ : “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।”
দুরুদ শরীফ অর্থ
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর বংশধরের প্রতি রহমত নাযিল করো যেমন রহমত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত নাযিল করো যেমন বরকত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। (সহীহ বুখারী, হাদীস:২৯৭০)
দুরূদে ইব্রাহীম ২
সহীহ হাদিসে দরূদে ইব্রাহিম বিভিন্ন শব্দ বর্ণিত হয়েছে। উপরের দুরুদটি ছাড়াও সহিহ সনদে নিম্নের দূরুদটিও রয়েছে। নামাজের ভিতর ও বাহির দুজায়গায়েই আপনারা এটি পড়তে পারবেন।
দুরুদে ইব্রাহীম ২ (দরুদ শরীফ আরবি)
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد وبارك على محمد وعلى آل محمد كما صليت وباركت على إبراهيم وآل إبراهيم إنك حميد مجيد
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আ-লি মুহা’ম্মাদ, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মুহা’ম্মাদ, কামা সল্লাইতা ওয়া বারাকতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ করুন এবং বরকত দান করুন, যেমনিভাবে আপনি ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি ও বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।
সূত্র: সুনানে আন-নাসায়ীঃ ৫৯/১৬৪, আত-তাহাবী। আবু সাঈদ ইবনুল আ’রাবী রহি’মাহুল্লাহ তাঁর “আল-মু’জাম” গ্রন্থে সহীহ সনদে এটি বর্ণনা করেছেন।
“জালাউল আফহাম” গ্রন্থে ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহি’মাহুল্লাহ এই দুরুদটিকে সহীহ বলেছেন। তাছাড়া আল্লামাহ নাসির উদ্দীন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ তাঁর রচিত “নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি” গ্রন্থে এই দরুদটি বর্ণনা করেছেন এবং একে সহীহ বলেছেন।
অর্থসহ ছোট দূরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ
ছোট দরুদ শরীফটি নামাজে পড়া যাবে না। সালাত ব্যতীত অন্য সব কাজে সংক্ষিপ্ত দুরুদ হিসেবে এগুলো পড়া যাবে। এ নিয়ে সাহাবী উকবা ইবনু আমির (রা) এর কথা হলো –
সাহাবী উকবা ইবনু আমির (রা) বলেন, “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে এসে বসল এবং বলল, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে কিভাবে সালাম জানাব তা আমরা জানি। কিন্তু আমরা আপনার উপর কিভাবে ‘সালাত’ তথা দরূদ পাঠ করব? আমাদেরকে তা বলে দিন।” তখন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম (কিছুক্ষণ) চুপ থাকলেন, এমনকি আমরা ভাবলাম যদি প্রশ্নকারী প্রশ্ন না করতো, তাহলে অনেক ভাল হত! তারপর নবী (সাঃ) বললেন, “তোমরা আমার উপর সালাত (দুরুদ) পাঠ করার জন্য বলোঃ
اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَبىّ الأُمِيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহা’ম্মাদিনিন-নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ’লা আলি মুহা’ম্মাদিন কামা সল্লাইতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আলি ইবরাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম-মাজীদ।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি নিরক্ষর নবী মুহা’ম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে রহমত প্রেরণ কর, যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত। (ইসমাঈল কাযীঃ হাদীস নং ৫৯)
ছোট দুরুদ নিয়ে আবার যায়েদ ইবনু খারিজাহ (রা) বলেন, “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে (দুয়া ও দুরুদের ব্যাপারে) প্রশ্ন করলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরা আমার উপর সালাত (দরূদ) পড় এবং অনেক বেশী দুয়া করার জন্য চেষ্টা কর। (আমার জন্য দুরুদ পড়ার জন্য তোমরা) এইভাবে বলোঃ
ছোট দরুদ শরীফ আরবি
الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মু’হাম্মাদ।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহা’ম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর রহমত বর্ষণ কর।
(সুনানে নাসায়ীঃ হাদীস নং-১২২৫)
اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبَيِّنَا مُحَمَّدٍ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা নাবিয়্যিনা মুহা’ম্মাদ।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।
সবচাইতে ছোট যেই দুরুদটি হলো –
صلى الله عليه وسلم
বাংলা উচ্চারণঃ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম।
বাংলা অর্থঃ আল্লাহ তাঁর (মুহাম্মদের) প্রতি সালাত (দয়া) ও সালাম (শান্তি) বর্ষণ করুন।
দুরুদ শরীফ কখন পড়তে হয়?
আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল বেলা আমার উপর দশবার দরুদ পাঠ করবে এবং বিকাল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ দ্বারা সৌভাগ্যবান হবে।” ইমাম তাবরানী হাদীসটি দুইটি সনদে সংকলন করেছেন, যার একটি সনদ হাসান। মাজমাউ’য যাওয়ায়েদঃ ১০/১২০, সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ১/২৭৩।
এধরণের দোয়া ও দুরুদ কোন সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এমন অনেক দোয়া ও দুরুদের মাঝে সরাসরি শিরক ও কুফরি কথা বর্ণিত আছে। তারপরও অনেকে এগুলো পাঠ করছে। তাই এখন থেকেই এসব বিষয়ে সবাইকে সাবধান হতে হবে।
কয়েকটি দোয়ার বইয়ের নাম
নিচে এমন কয়েকটি দো’য়ার বইয়ের নাম দেওয়া হলো যেগুলোর কোন দলিল নেই।
- আহাদ নামা
- দুয়ায়ে গাঞ্জুল আরশ
- হাফতে হাইকল
- হিজবুল বাহার্ ইত্যাদি।
এরকম বইগুলোতে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত বা মানুষের বানানো দোয়া একসাথে মিশিয়ে দোয়ার মত করে বানানো হয়েছে। আমাদের নবী (সাঃ) এসব করেন নি এবং এসব করার অনুমোদনও কাউকে দেন নি। এভাবে উল্টাপাল্টা জিনিস তেলাওয়াত করার কারণে কুরআনের শব্দ, অর্থ চেঞ্জ হয়ে যায়। তাই এগুলো তেলাওয়াত করা বেদআত।
নিম্নে এমন কয়েকটি দরুদ শরীফের নাম উল্লেখ করা হলো যেগুলো মিথ্যা – বানোয়াট
- দুরুদে হাজারী
- দুরুদে নারিয়া
- দুরুদে মাহী
- দুরুদ তাজ
- দুরুদে লাখী
- দুরুদে তুনাজ্জিনা ইত্যাদি।
এসব দরূদগুলো মানুষের তৈরি করা। এগুলো পাঠ করলে কোন সওয়াব নেই বরং এগুলো পাঠ করা বেদআত। এতে গুনাহ হয়। দুরুদ শরীফের মাঝে সবচেয়ে উত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ হলো দরুদে ইব্রাহীম। এটা আমরা নামাজে পড়ে থাকি। একবার এ দরুদ শরীফ পাঠ করলে আল্লাহ তা’আলা ১০ বার রহমত করেন।
বিষেষ করে মা-বোনেরা ওযীফার বই থেকে বেদআতী দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ে থাকে। আপনারা দয়া করে এসব বই পড়বেন না। যেসকল হাদিস সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত সেসব দোয়া পাঠ করবেন।
দরুদ শরীফ পড়ার নিয়ম
দরুদ পাঠ করা হলো নবী (সাঃ) উপর সালাম পেশ করা। দুরুদ ফারসী শব্দ, এর অর্থ হচ্ছেঃ আল্লাহ তা’আলার কাছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য রহমত, বরকত ও শান্তির জন্য দোয়া করা।
মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে বলা হয়েছে “অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনরা! তোমরাও তাঁর প্রতি যথাযথ দরুদ ও সালাম পেশ করো” (সূরা : আহজাব, আয়াত : ৫৬)। নিম্নে দুরূদ শরীফ পড়ার নিয়ম আলোচনা করা হলো –
- জীবনে একবার দরুদ-সালাম পাঠ করা হচ্ছে ফরজে আইন।
- দুরুদ-সালাম অত্যন্ত আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে খুব ধীরস্থিরভাবে আস্তে আস্তে পড়া উচিত।
- দুরুদ শরীফ পড়ার সময় বারবার নড়াচড়া, মাথা দুলানো, চিৎকার বা উঁচু আওয়াজ করা যাবে না।
- একই সাথে বারবার (এক বৈঠকে) নবী (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে প্রথমবার সবার জন্য দূরুদ পাঠ করা আবশ্যক। (ওয়াজিব)
- নবীজি (সা.)-এর নাম এক বৈঠকে বারবার লিখলে প্রথমবার দুরুদ লিখা আবশ্যক। (ওয়াজিব)
তবে অজু ছাড়া যে দুরূদ পড়া যাবে না এমন নয়। যে কোনো অবস্থাতেই দরুদ শরীফ পাঠ করা যাবে। বিশেষত অজু অবস্থায় এবং আদবের সাথে দরুদ পড়া উত্তম। তাছাড়া
জুমা বা ঈদের খুতবায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম এলে মনে মনে দরুদ পড়বে, মুখে উচ্চারণ করা যাবে না । এগুলো ছাড়াও নিম্নোক্ত অবস্থায় দরূদ পড়া যাবে-
- নবীজি (সাঃ) এর রওজা শরিফ জিয়ারত ও তার নাম বলার সময় বা শোনার সময়।
- মসজিদে প্রবেশের সময় ও বের হওয়ার সময় দরুদ পড়া যাবে।
- কোনো বৈঠক থেকে ওঠার সময় দূরুদ পড়া যাবে।
- দোয়া বা মোনাজাতের আগে ও পরে পড়া যাবে।
- আজানের পর ও দোয়ার আগে।
- অজুর শেষে, চিঠিপত্র বা অন্য কিছু লিখার পূর্বে।
- কুরআন তেলাওয়াত বা অন্য কোনো বইপুস্তক পড়ার পূর্বে।
- দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও সব ধরণের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সব সময় বেশি করে দরুদ পড়ুন।
দুরূদ শরীফের ফজিলত
আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) যেকোন একটি নির্দিষ্ট জাতির জন্য আবির্ভূত হন নি। তিনি সারা পৃথিবীর জন্য রহমত স্বরূপ আবির্ভূত হয়েছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে –
“আর আমি তো আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।”
এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে নবী (সাঃ) আমাদের জন্য রহমত স্বরূপ। নিচে দুরূদ শরীফ পাঠের ফজিলত নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো –
রাসূল (সা.) এর প্রতি ভালবাসা নিয়ে দরুদ পাঠ করা উত্তম ইবাদত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেও দুরুদ পাঠ করার জন্য তাঁর উম্মতদের বলেছেন এবং দরুদ পাঠের ফজিলত ও মাহাত্ন্য সম্পর্কে তাঁর উম্মতদের জানিয়ে দিয়েছেন।
দুরুদ শরিফ পাঠ করলে সহজেই দোয়া কবুল হয়। হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বলেন, নিশ্চয় বান্দার দোয়া-মোনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলানো থাকে, তার কোনো কিছু আল্লাহপাকের নিকট পৌঁছে না যতক্ষণ না বান্দা তার নবী (সা.) এর প্রতি দরুদ পাঠ করবে। (তিরমিজী শরিফ)
প্রিয় নবী (সাঃ) এর নাম শোনার পর দরুদ শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব। রাসূল (সা.) নাম মুবারক উচ্চারণ অথবা শোনার পর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এই দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। যদি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম না পড়া হয় তাহলে গুনাহগার হতে হবে। যদি কোনো আলোচনায় বা মাহফিলে নবী (সা.) এর নাম নেয়া হয় তবে প্রথমবার সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলা ওয়াজিব। এরপর যতবার নবীজি (সা.) এর নাম নেয়া হবে ততবার সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলা মুস্তাহাব। কিন্তু একবারও যদি দরুদ-সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম না পড়া হয় তাহলে গুনাহগার হতে হবে।
তাই যে আলোচনায় হোক না কেন, রাসূল (সাঃ) এর নাম যতবার নেওয়া হবে ততবারই সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম পড়ে মুস্তাহাব এর সওয়াব পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয় সে যেন তৎক্ষণাৎ আমার ওপর দরুদ শরিফ পড়ে।”
উবাইদুল্লাহ বিন উমর কাওয়ারী রহ. বর্ণনা করেন, আমার প্রতিবেশী একজন কতিব ছিলেন। তার ইনতিকালের পর স্বপ্নে তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? তিনি উত্তর দিলেন- আমাকে মাফ করে দিয়েছেন। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করায় তিনি উত্তরে বললেন, কিতাব লেখার সময় যখনই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক আসত, তখনই হুযুরের নামের সাথে সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম লেখা আমার অভ্যাস ছিল। এর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এমন নিয়ামত দান করেছেন, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি, কোন অন্তর কখনো তার কল্পনাও করেনি। সুবাহানাল্লাহ।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গী হওয়ার সবচেয়ে অধিক উপযুক্ত সেই ব্যক্তি,যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করে। (তিরমিজী শরিফ)
নবী (সাঃ)আরও ইরশাদ করেন – “ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে আমার উপর বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করে।” (তিরমিজী শরিফ)
তিনি মহানবী (সাঃ) আরও বলেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করবেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। (মুসতাদরাকে হাকেম হাদীস নং-২০৫৬)
নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেন– যে ব্যক্তি সকালে আমার উপর দশবার দুরূদ পড়বে এবং সন্ধ্যায় দশবার দুরূদ পড়বে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করব। (ত্ববারানী আউসাত হাদীস নং-৫২৩, নাসায়ী সুনানে কুবরা, হাদীস:৯৮৯০)
হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের যে দল কোনো মজলিসের কাজ শেষ করে আল্লাহপাকের জিকর ও দরূদ পাঠ না করে সেখানে থেকে উঠে পড়বে তাদের ওই মজলিস তাদের জন্য দুঃখ-কষ্টের কারণ হবে।
এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির উপর রহমত নাজিল করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য রহমতের দোয়া করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)
নামাজের মধ্যে দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। দরুদে ইব্রাহিম বেশ ফজিলতপূর্ণ বিষয়। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে এই দরুদ পড়া হয়। শুধু নামাজ নয়, নামাজ ছাড়াও অন্যান্য যেকোনো সময় এই দরুদ শরীফ পাঠে রয়েছে মুস্তাহাব সাওয়াব।
জুমার দিনে বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পড়ার ফজিলত
আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে –
জুমার নামাজের দিন বেশি বেশি দরুদ পড়তে বলা হয় এর কারণ কি?
তাহলে চলুন এর উত্তর জেনে নেই। শুক্রবারের দিন করণীয় কাজের মাঝে অন্যতম হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করা। এ সম্পর্কে আউস বিন আউস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন –
“তোমাদের দিন সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাকে মৃত্যু দেওয়া হয়েছে, এই দিনে সিংগায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং মহা বিপর্যয়ও (কিয়ামত) ঘটবে এই দিনেই। তাই এই দিনে তোমরা বেশি বেশি আমার উপর দরুদ পাঠ করবে; কেননা তোমাদের দরুদ আমার উপর পেশ করা হয় জুমার দিনে। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করল যে, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কবরে গলে শেষ হওয়ার পরেও কিভাবে আপনার উপর দরুদ পেশ করা হয়? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য নবীদের দেহ ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন।”
উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায় যে, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি সালাম ও দুরূদ শরীফ পাঠ করলে মুমিন বান্দাদের জন্য সৌভাগ্যের বা রহমতের সব দরজা খুলে যাবে। দুরূদবিহীন মুমিন বান্দার কোনকিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছাবে না। তাই আমাদের উচিত প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করা।
তো আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি দুরুদ শরীফ সম্পর্কে অল্প কিছু হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করবেন আর এ নিয়ে কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু।